মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বন্দরখোলা ইউনিয়নের চরাঞ্চলের বাতিঘরখ্যাত এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় অবশেষে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়েছে। বুধবার মধ্যরাতে বিদ্যালয়টির মাঝ বরাবর দ্বিখণ্ডিত হয়ে হেলে পড়ে। ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটি বিলীন হয়ে যায়। পদ্মায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় চরাঞ্চলে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। ঘরবাড়ি ভেঙে নিরাপদ স্থানে ছুটে যাচ্ছে চরাঞ্চলের অসংখ্য মানুষ। এছাড়া পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ।এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩ তলা ভবনটি পদ্মায় বিলীন হয়ে যায়। ২০০৯ সালে স্থাপিত হয় নূরুদ্দিন মাদবরেরকান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়। বন্দরখোলা ইউনিয়নের চরাঞ্চলে স্থাপিত এ বিদ্যালয়টিতে শিবচর উপজেলার বন্দরখোলা ইউনিয়নের মমিন উদ্দিন হাওলাদারকান্দি, জব্বার আলী মুন্সীকান্দি, বজলু মোড়লের কান্দি, মিয়া আজম বেপারিরকান্দি, রহমত হাজীরকান্দি, জয়েন উদ্দিন শেখকান্দি, মসত খাঁরকান্দিসহ প্রায় ২৪টি গ্রাম ও ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার চরনাসিরপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করত। এটি ছিল চরাঞ্চলের একমাত্র দৃষ্টিনন্দন তিনতলা ভবনসহ আধুনিক সুবিধাসমৃদ্ধ একটি উচ্চ বিদ্যালয়। প্রায় চারশ’ ছেলেমেয়ে এ বিদ্যাপীঠে লেখাপড়া করত।
মূল ভূখণ্ড থেকে দূরে হওয়ায় চরের ছেলেমেয়েরা অন্যত্র গিয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ পেত না। এ বিদ্যালয়টি হওয়ায় তারা পড়াশোনার সুযোগ পায়। স্থানীয়রা জানায়, পদ্মার নিকটবর্তী হওয়ায় প্রতি বছরই বন্যার পানিতে ডুবে যেত বিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকা। গত বছর পদ্মা নদী ভাঙতে ভাঙতে পেছন দিক দিয়ে বিদ্যালয়টির কাছে চলে আসে। এরপর গত বছরই জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরীর নির্দেশে ওই এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকিয়ে রাখে। চলতি বর্ষা মৌসুমেও ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং চলতে থাকে ওই এলাকায়। তবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রচণ্ড স্রোতের কারণে জিও ব্যাগ ফেলে তেমন সুবিধা করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ফয়সাল বলেন, বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে যাওয়ায় এলাকায় হয়তো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হবে। কিন্তু এত আধুনিক সুযোগ-সুবিধা তো আর পাওয়া যাবে না।
বন্দরখোলা ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. ইসমাইল জানান, ‘বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ করেই বিকট শব্দ হতে থাকে স্কুলের ভবনের মধ্য থেকে। খবর পেয়ে অসংখ্য মানুষ ট্রলারে করে বিদ্যালয়টি দেখতে আসে। আমাদের সামনেই বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। মনোরম পরিবেশে একটি দৃষ্টিনন্দন বিদ্যালয় ছিল এটি। রাতে বিদ্যালয়টি ভাঙন ধরলে এলাকাবাসী কান্নায় ভেঙে পড়ে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন জানান, চরের চার শতাধিক শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার অনিশ্চিত জীবন শুরু হল।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান জানান, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর এবং করোনার প্রভাবমুক্ত হলে চরে অস্থায়ীভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া চালিয়ে নেয়া হবে।